এমডি বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল ও ফরিদুল আলমে কুলুষিত বীমা শিল্প

doinikjamalpurbarta

ডেক্স রিপোর্ট দৈনিক জামালপুর বার্তা: সদ্য যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদবী থেকে ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

যমুনা লাইফে নিয়োগের ৫ মাসের মাথায় তিনি ও তার প্রধান সহযোগী মোঃ ফরিদুল ইসলাম এর বিভিন্ন দুর্নীতি, স্বজন প্রীতি, আর্থিক অনিয়ম, পছন্দের লোকদের ব্যবসা ছাড়াই বেতন প্রদান ও নানাবিধ অভিযোগের , দরুন ১৪/০১/২০২৫ ইং মঙ্গলবার চাকরি হারালেন বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল ।

কিন্তু তার দোসর ফরিদুল আলম এখনো বহাল তবিয়তে যমুনা লাইফে অফিস করে যাচ্ছেন, তাই কর্মীদের মনে হোমল্যান্ড লাইফের মত যমুনাতেও আর্থিক অনিয়মের আস্থা সুদূরপ্রসারী হতে পারে এমন প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে।
যমুনা লাইফের চেয়ারম্যান বদরুল আলম খান তার অব্যাহতি পত্রে স্বাক্ষর করেন।

পত্রে বলা হয়, ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত কোম্পানির ৫৪তম পরিচালনা পর্ষদ সভার সিদ্ধান্তক্রমে আপনাকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়, সেই সাথে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছিল।

কিন্তু কোম্পানির বৃহত্তর স্বার্থে অদ্য ১৪ জানুয়ারি -২০২৫ থেকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ (চলতি দায়িত্ব) হতে আপনাকে অব্যহতি দেয়া হলো। যমুনা লাইফের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর করা ওই চিঠির অনুলিপি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যানকে দেয়া হয়েছে এটি নিশ্চিত করেছেন কর্তৃপক্ষ ।

কোম্পানির একটি সূত্রে জানা গেছে, যমুনা লাইফের চেয়ারম্যান বদরুল আলম খান এর এরকম সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়াতে কর্মী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে জানতে কোম্পানির চেয়ারম্যান বদরুল আলম খান এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে অসুস্থতা বানিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি এবং মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (চঃদাঃ) ড. বিশ্বজিত কুমার মন্ডলের মোবাইলে একধিকবার ফোন দেয়া হলেও তার ফোনটি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য ও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

তার ইন্সুরেন্স ক্যারিয়ার থেকে জানা যায় ১৯৯৮ সালে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেড এ জয়েন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগদান করে ২০০০ জুন এ সান লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এ জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করে।

২০০৫ জুন রূপালি লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এ ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর যোগদান করেন। পরবর্তীতে মার্চ ২০১৪ চার্টার্ড লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেড এ অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে যোগদান করে।

মাত্র এক মাস চাকরি করে মার্চ ২০১৪ তে পুনরায় যমুনা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এ মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ১২ কোটি টাকা ট্যাক্স ও প্রায় ৩ কোটি টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেনি এমনকি
৬ বছর ২ মাস কর্মরত সময়ে লাইফ ফান্ডও প্রায় ৬ কোটি টাকা (মুলধন) ঘাটতি করেছিলেন যা অদ্যবদি তেমনই রয়ে গেছে।

পরবর্তিতে মে-২০২২ থেকে অক্টোবর-২০২৩ পর্যন্ত হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ১ বছর ৬ মাস দায়িত্ব পালনকালে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে আইডিয়ারে কর্তৃক অপসারিত হয়েছিলেন।

ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলের হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ের দুর্নীতি নিয়ে আইডিয়ারের ১ চিঠিতে জানা যায় যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ৮ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল কে আইন অনুবিভাগ হতে মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ (পরিচালক আইন) স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠিয়েছেন।
যাহাতে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে প্রাপ্ত অনিয়মের বিষয়ে কারণ দর্শানো হয়েছে।

পত্রের হুবহু কপি তুলে ধরা হলো,
উপর্যুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক কর্তৃপক্ষের জারিকৃত সার্কুলার/নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে অনুসৃত হচ্ছে কিনা তা নিরীক্ষা করার জন্য নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান এম জেড ইসলাম এন্ড কোং-কে নিয়োগ করা হয়। দাখিলকৃত নিরীক্ষা প্রতিবেদনে আপনি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালীন প্রাপ্ত অনিয়ম নিম্নরূপ:

১. কোম্পানির ২০২২ সালের নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি কোয়ালিফাইড ছিল বলে প্রতিষ্ঠানটির স্ট্যাটুটরি অডিটর উল্লেখ করেছেন।

কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ সাল পর্যন্ত কোম্পানির বীমা দাবি ছিল ৩,৭৭,৪৫,৭২৫/- (তিন লক্ষ সাতাত্তর হাজার পঁয়তাল্লিশ হাজার সাতশত পঁচিশ) টাকা কিন্তু কোম্পানির নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিসাব মতে ৩৩,৪৬৬ টি দাবির বিপরীতে কোম্পানির বীমা দাবি ছিল ৬৮,৫৬,৭০,৪০৬ (আটষটি কোটি ছাপ্পান্ন লক্ষ সত্তর হাজার চারশত ছয়) টাকা এবং পরবর্তী বছর ৩৭,১১২ টি দাবির বিপরীতে বীমা দাবি ছিল ৭৯,৭০,০৯,৩২০/- (উনআশি কোটি সত্তর লক্ষ নয় হাজার তিনশত বিশ) টাকা। এক্ষেত্রে কোম্পানির উপস্থাপিত তথ্যে যথেষ্ট গরমিল রয়েছে।

২. ২০২২ সালে এফডিআর ২১,২৪,৯৬,০২২/- (একুশ কোটি চব্বিশ লক্ষ ছিয়ানবাই হাজার বাইশ) টাকা থেকে কমে ৬১,৩৮,৯৯৮/- (একষট্টি লক্ষ আটত্রিশ হাজার নয়শত আটানব্বই) টাকা হয়েছে। মোট কমেছে ২০,৬৩,৫৭,০২৪/- (বিশ কোটি তেষট্টি লক্ষ সাতান্ন হাজার চব্বিশ) টাকা। ২০,৬৩,৫৭,০২৪/- টাকা কোথায়, কিভাবে খরচ করা হয়েছে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রয়োজন।

৩. ২০২৩ সালে এম জেড ইসলাম এন্ড কোং কর্তৃক নিরীক্ষাকালীন কোম্পানি কর্তৃক নিরীক্ষা দলকে ৩৫৩ টি ব্যাংক একাউন্টের মধ্যে ২১৯ টি ব্যাংক একাউন্টের তথ্য প্রদান করা হয়েছে।

বাকি ১৩৪ টি একাউন্টের তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি। এছাড়া নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বছর ভিত্তিক ব্যাংক হিসাব বিবরণী দেখাতে বললে কোম্পানি তা উপস্থাপন করতে পারেনি। এ বিষয়ে কোন তথ্য প্রদান করা হয়নি।

উল্লিখিত অনিয়মসমূহ আপনি (বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল) হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালীন হয়েছে বিধায় আপনার এসব অনিয়মের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

এই অবস্থায়, উল্লিখিত অনিয়মসমূহের দরুণ আপনার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা তার জবাব আগামী ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

যা ১৮ জানুয়ারি শেষ হলেও যথাযথ উত্তর দিতে সক্ষম হননি মন্ডল মন তথ্যই উঠে এসেছে,আইডিয়ারে আর বিরুদ্ধে ঈগর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলেও তথ্য রয়েছে।
এরকম আরো অনেক দুর্নীতি রয়েছে এই ডক্টর বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল এর নামে।

 

এবার আসা যাক তার শীর্ষের বিষয়, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের কর্মরত থাকাকালীন
মোহাম্মদ ফরিদুল আলম ডিএমডি হেড অব মার্কেটিং হিসেবে বিভিন্নভাবে অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান ও আর্থিক অনিয়ম করেছিলেন তার জন্য কোম্পানিটি ৩১/১২ ২০২৩ সালে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন,তিনি যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হননি সেই মর্মে প্রতিবেদকের তথ্যে উঠে এসেছে।

হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান ও আর্থিক অনিয়মের
উপযুক্ত বিষয়ে আপনার (ফরিদুল আলম) অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আপনি অত্র কোম্পানীতে যোগদানের (আগষ্ট/২২ থেকে) পর থেকে ২০২২ইং ১ম বর্ষ ব্যবসা করেছেন ২২,৪৪,৫২,২৮৪/- টাকা, এর অনুকুলে খরচ করেছেন ২৩,৩৩,৬৩,০৪০/- টাকা।

২০২৩ইং সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১ম বর্ষ ব্যবসা করেছেন ৪১,৯৮,৯৬,৩২৫/- টাকা এর অনুকুলে খরচ করেছেন ৪৬,১৩,৮২,০৮২/- টাকা।

বিশ্লেষনে দেখা যায় ২০২২ইং সালে ৮৯,১০,৭৫৬/- টাকা এবং ২০২৩ইং সালে ৪,১৪,৮৫,৭৫৬/- টাকা সহ সর্বমোট ৫,০৩,৯৬,৫১৩/- টাকা অতিরিক্ত বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া নিজের খেয়াল খুশি মত উন্নয়ন কর্মকর্তাদের সুবিধা প্রদান করেছেন। এতে কোম্পানী আর্থিক ভাবে প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

যাহা আপনার মত উচ্চ পদস্থ দায়িত্বশীল কর্মকর্তার নিকট থেকে কোন অবস্থাতেই আশা করা যায় না। তাছাড়া আপনার তত্ত্বাবধানে ২০২২ইং সালে বিক্রিত পলিসির ২২,৪৪,৫২,২৮৪/- টাকার মধ্যে ২০২৩ইং সালের নবায়ন ব্যবসার হার খুবই নগন্য শতকরা ৫%। মোট প্রিমিয়াম ৫৩,৮৪,৮৬৩/- টাকা মাত্র, যাহা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক এবং আপনি কোম্পানীকে আর্থিক নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে ফেলেছেন বলে অনুমিত হচ্ছে।

বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া কিভাবে ১ম বর্ষ ব্যবসার অতিরিক্ত ৫,০৩,৯৬,৫১৩/- টাকা উন্নয়ন কর্মকর্তাদের প্রদান করেছেন এবং ২০২২ইং সালের বিক্রিত ১ম বর্ষ ব্যবসার বিপরীতে কেন নবায়ন ব্যবসার হার ৫% জমা হচ্ছে, তাহা কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা আশা করে।
উল্লেখ্য তিনি সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন মরমে অভিযোগ রয়েছে

তিন দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষ বরাবরে উপযুক্ত তথ্যসহ সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ মোতাবেক অসঙ্গতিপূর্ণ দায়সারা জবাব দিলেও কোম্পানিটিতে আর টিকতে পারেননি।
এরকম বিগত দিনের কোম্পানিগুলিতে মূলত থাকাকালীন অবস্থায় ও তার নামে রয়েছে প্রচুর অনিয়ম আর্থিক কেলেঙ্কারি সহ নানাবিধ অভিযোগ।

SHARES

ফেসবুকে অনুসরণ করুন

আরো পোস্টঃ