নিজস্ব প্রতিবেদক দৈনিক জামালপুর বার্তা : ইতিহাস বিষয়ের স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হয়ে ইতিহাসের প্রভাষক পদে চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বৈধতা নিয়ে মামলায় হেরে একই কলেজের কম্পিউটার বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে জামালপুরের বকশিগঞ্জের খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে।
মো. রেজাউল করিম তার এমপিওভুক্ত হওয়া ইতিহাসের প্রভাষক পদের ইনডেক্স নম্বর ঠিক রেখে একই কলেজে কম্পিউটার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদে চাকরি করছেন। কিন্তু ইতিহাস বিষয়ের ইনডেস্ক নম্বরেই নিয়মিত বেতনভাতা ভোগ করছেন। জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি করায় বেসরকারি কলেজ শিক্ষক নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করেছেন তিনি। কথিত সহকারী অধ্যাপক মো. রেজাউল করিমের জালিয়াতি তদন্ত করে বরখাস্তসহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির দাবি উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে কলেজ প্রতিষ্ঠার বছরেই খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইতিহাস বিষয়ের প্রভাষক পদের নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরি প্রত্যাশী রীতা রানী মিত্র প্রথম এবং মো. রেজাউল করিম দ্বিতীয় হন। ওই বছরের ১৮ অক্টোবর প্রথম হওয়া রীতা রানী মিত্রকে ইতিহাসের প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্ত প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকারী উভয়কে একই দিনে অর্থাৎ ১৯৯৪ সালের ২৬ অক্টোবর নিয়োগপত্র ইস্যু করা হয়। নিয়োগপত্রে প্রথম স্থান অধিকারীকে ওই বছরের ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকারীকে ১ নভেম্বরের মধ্যে যোগদান করতে বলা হয়। এভাবে যোগদানের তারিখ আগে পিছে করে মো. রেজাউল করিমকে চাকরি দেওয়ার অপচেষ্টা করেন তৎকালীন অধ্যক্ষ।
জালিয়াতির উদ্দেশে যোগদানের পত্র দেওয়া এবং রেজাউল করিমকে প্রভাষক পদে নিয়োগের বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালতের রায়ে রীতা রানী মিত্র তার পদ ফিরে পান। মামলায় হারার পরও ১৯৯৪ সালের ১ নভেম্বর ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদানের পর ২০০২ সালের এমপিওভুক্ত হওয়ার ইনডেস্ক নম্বরটাকেই (৮৩৭৪১৩) কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠেন মো. রেজাউল করিম। অথচ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ওই ইনডেস্কের বিপরীতে তার বেতনভাতার সরকারি অংশ স্থগিত রেখেছে।
ফের জালিয়াতির মাধ্যমে ২০০৪ সালের ৮ আগস্ট মো. রেজাউল করিম কম্পিউটার বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। একই সঙ্গে জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপকের পদোন্নতিও করিয়ে নেন। কলেজের অধ্যক্ষ মো. বজলুল করিম তালুকদারের যোগসাজশে মো. রেজাউল করিম ইতিহাস বিভাগের প্রভাষকের এমপিওভুক্ত এবং ইনডেস্ক নম্বরের বিপরীতেই বর্তমান সময় পর্যন্ত সহকারী অধ্যাপকের টাইমস্কেলসহ বেতনভাতা ভোগ করছেন। কিন্তু কম্পিউটার বিভাগের প্রভাষক পদে তার এখনও এমপিওভুক্ত হয়নি। এই বিষয়ে তার ইনডেস্ক নম্বরও পড়েনি। বেসরকারি কলেজে প্রভাষক পদে চাকরিপ্রার্থীকে সেই বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হতে হবে। তার রয়েছে কম্পিউটার বিষয়ে আট মাস মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সায়েন্স সনদ। এ ছাড়াও তিনি কলেজে উপস্থিত থেকেও কম্পিউটার বিষয়ে ক্লাস না নিয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক দিয়ে ক্লাস নেয়ার অভিযোগও উঠেছে।
কিন্তু মো. রেজাউল করিম ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হয়ে কিভাবে তিনি কম্পিউটার বিভাগের প্রভাষক পদে চাকরি পেলেন তা খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে। কম্পিউটার বিভাগের প্রভাষক পদে মো. রেজাউল করিমের ডিপ্লোমা ইন কমম্পিউটার সায়েন্স সনদটি আট মাস মেয়াদি। প্রশিক্ষণদানকারী প্রতিষ্ঠানটির কোর্স ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিনি ২০০৪ সালের ৮ আগস্ট কম্পিউটার বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। প্রতিষ্ঠানটির এ সনদটি নিয়োগবিধি শর্তের মধ্যে পড়ে কি না সেটাও খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে।
এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে মো. রেজাউল করিম বলেন, আমার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বৈধভাবেই সম্পন্ন হয়েছে।