নিজস্ব প্রতিনিধি দৈনিক জামালপুর বার্তা :
জামালপুর সদরের তুলশীপুর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো. শাকিল হোসেনের বিরুদ্ধে একই সাথে তিন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করার অভিযোগ উঠেছে।
তথ্য গোপন করে তিনি ওই কলেজের ডিগ্রী শাখার প্রভাষক হয়েও একই সঙ্গে আরও দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন বলে জানায় বিভিন্ন সূত্র। অভিযুক্ত শিক্ষক মো. শাকিল হোসেন জামালপুর সদর উপজেলার রানাগাছা ইউনিয়নের নান্দিনা এলাকার বাসিন্দা।
জানা যায়, শাকিল হোসেন বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে নিয়ম বহির্ভুত ভাবে একসাথে তিন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে আসছেন। তিনি বর্তমানে সদর উপজেলার রশিদপুর ইউনিয়নের তুলশীপুর ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি শাখায়, রানাগাছা ইউনিয়নের নান্দিনা শেখ আনোয়ার হোসেন ডিগ্রি কলেজের অনার্সের হিসাব বিজ্ঞান শাখায় এবং শ্রীপুর কুমারিয়ায় নাছুবা হাকিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শাখার হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
শাকিল হোসেনের এমন কর্মকান্ডে কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও অধ্যক্ষের সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জামালপুর সদর উপজেলার রশিদপুর ইউনিয়নের তুলশীপুর ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি শাখায় অভিযুক্ত শিক্ষক শাকিল হোসেন ২০১৪ সালে যোগদান করে চাকরি বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা ভোগ করে আসছেন।
একই সাথে শ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর কুমারিয়া নাছুবা হাকিম উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজে প্রভাষক পদে ২০১৫ সালে যোগদান করেন তিনি। এছাড়াও ২০১৬ সালে রানাগাছা ইউনিয়নের নান্দিনা শেখ আনোয়ার হোসেন ডিগ্রি কলেজের অনার্স শাখায় হিসাব বিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করে বেতন-ভাতা ভোগ করছেন তিনি।
বিধি মোতাবেক পূর্বের চাকুরি হতে অব্যাহতি নিয়ে নতুন চাকুরিতে যোগদান করার কথা থাকলেও এই নিয়ম তিনি মানছেন না। এতে করে তিনি বিধি লঙ্ঘন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সংকট তৈরি করেছেন। যার ফলে স্কুল ও কলেজে পাঠদান কার্যক্রম ব্যহত হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানতে চাইলে অভিযোগ স্বীকার করে মো. শাকিল হোসেন বলেন, তিনি শ্রীপুর কুমারিয়া নাছুবা হাকিম উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ এবং তুলশীপুর ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি শাখায় যোগদান করলেও এই দুই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে তিনি অনিয়মিত। তিনি নান্দিনা শেখ আনোয়ার হোসেন ডিগ্রি কলেজে অতিথি শিক্ষক হিসেবে তার চাকুরি জীবন অতিবাহিত করছেন।
নান্দিনা শেখ আনোয়ার হোসেন ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শহিদুজ্জামান বলেন, শাকিল হোসেন তাদের কলেজে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের একজন খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ২০১৬ সাল থেকে কর্মরত রয়েছেন।
শাকিল হোসেন অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত আছেন কিনা সে বিষয়ে অধ্যক্ষ শহিদুজ্জামান কিছু জানেন না বলে দৈনিক জামালপুর বার্তা কে জানান।
তুলশীপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম লিচু বলেন, ২০১৪ সাল থেকে শাকিল হোসেন তুলশীপুর ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি শাখায় নিয়োগ প্রাপ্ত।
ডিগ্রি শাখায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত থাকায় শাকিল হোসেন মাঝে মাঝে কলেজে আসেন। তবে একশত ভাগ তিনি তুলশীপুর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক এবং শাকিল হোসেনও এই প্রতিষ্ঠানের পরিচয় বহন করেন।
তবে নাসুবা হাকিম স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক ও প্রভাষকরা তাদের প্রতিষ্ঠানে মো. শাকিল হোসেনকে বিভিন্ন সময় শ্রেনীকক্ষে পাঠদানরত অবস্থায় দেখলেও এ বিষয়টি অস্বীকার করেন অত্র প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ নাছিম আলম সুজা।
এ বিষয়ে জামালপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিন্নাত শহীদ পিংকি জানান, লোকমুখে অভিযোগ পেয়ে তিনি ওই তিন প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের ডেকেছিলেন।
তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নাসুবা হাকিম স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাছিম আলম সুজা শাকিল হোসেনের নিয়োগের বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং শেখ আনোয়ার হোসেন ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ বিষয়টি জানতেন না মর্মে স্বীকারোক্তি দেন।
তিনি আরো বলেন, শাকিল হোসেন যেহেতু তুলশীপুর ডিগ্রি কলেজে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন প্রভাষক সেহেতু ওই প্রতিষ্ঠান বাদে কোন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ছাড়া তিনি অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করতে পারবেন না। এরপরেও শাকিল হোসেন যদি তার পূর্বের কার্যক্রম চালাতে থাকেন তবে তার বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেওয়া