তৌকির আহাম্মেদ হাসু স্টাফ রিপোর্টার: পিতার সময় থেকে বিরোধ এবং সেই বিরোধ থেকে মামলা। দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে একবার। একে একে ১০ বছরে দুই পক্ষের মোট ১০টি মামলা। এলাকা ও পৌরসভায় ১০ বারের বেশি মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও সেখানে ব্যর্থ হয় সবাই। থানাতেও সালিশি হয় একাধিকবার। এত কিছুর পর সবাই যখন ব্যর্থ, তখন টানা চার দিন বৈঠক-সালিশি শেষে ৩০ বছরের বিরোধ মীমাংসা করেছে জামালপুর থানা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর মোঃ মোহেব্বুল্লাহ।
এই ঘটনা জামালপুর শহরের শেখেরভিটা এলাকার। গত ৫ জুলাই রাতে এলাকায় এই বিরোধ মীমাংসা করা হয়। অবসান হয় শত রাগ, কষ্ট ও ক্ষোভের। বিরোধ মীমাংসাতে সহায়তা করেন ১১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান সাইফুল মণ্ডল ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান বিপুলসহ স্থানীয় বিএনপি নেতারাও।এরপর এলাকার ৪০০ লোকের জন্য মিল্লি ভাতের আয়োজন করে দুই পরিবার মিলে।
বিরোধ হওয়া ব্যক্তিরা হলেন শেখেরভিটা এলাকার মৃত আব্দুল খালেকের সন্তান শাকিল আহম্মেদ ইকবাল (৪২) ও মৃত নুরুল হকের সন্তান নজরুল ইসলাম (৪৯)। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই এবং দুইজনই ব্যবসায়ী।
দুই ভাই সাংবাদিকদের জানান— ফুপু মর্জিনার জমির ৭.৩১ শতাংশ জমি নজরুল ইসলাম ও ৫.৭০ শতাংশ ইকবাল ক্রয় করেন। এরপর থেকে সেই জমির সড়ক, দাগ ও খতিয়ান নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। বিরোধটি সাংঘর্ষিক পর্যায়ে যায় ২০১২ সালে, এরপর একবার সংঘর্ষ হয় তাদের মধ্যে। জমি ও মারামারির ঘটনাসহ কয়েকটি বিষয়ে নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ৫টি মামলা ও ইকবাল বাদী হয়ে ৫টি মামলা দায়ের করেন।
নজরুল ইসলাম বলেন— ‘আমাদের বছরের বেশির ভাগ সময় এই মামলার পেছনে ছুটতাম। আমাদের অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এলাকা, পৌরসভাসহ রাজনৈতিক দলের নেতারাও আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। অবশেষে জামালপুর থানার এসআই মোঃ মোহেব্বুল্লাহ স্যার আমাদের বিরোধ মীমাংসা করেছেন।এসআই মোঃ মোহেব্বুল্লাহ এর জন্য এলাকাবাসীর ভালোবাসা ও সম্মান সত্যিই অনন্য।তার মানবিকতা ও নিষ্ঠার প্রমাণ মেলে যখন এলাকায় উপস্থিত প্রায় ৪০০ জন মানুষ একত্রিত হয়ে তার সুস্থতা ও মঙ্গল কামনায় দোয়া করেন।এই দৃশ্য ছিল শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার এক উজ্জ্বল নিদর্শন।
শাকিল আহম্মেদ ইকবাল বলেন— ‘আমাদের পূর্বপুরুষ থেকে হয়ে আসা এই বিরোধ আমাদের অনেক ভুগিয়েছে। সবশেষে একজন পুলিশের সমঝোতায় আমরা এক হতে পেরেছি। আল্লাহর কাছে আমরা হাজারো শুকরিয়া জানাই।
জামালপুর থানার এসআই মোঃ মোহেব্বুল্লাহ জানান— ‘এই দুই ভাইয়ের মামলা যখন আমি হাতে পাই তখন থেকেই বিরোধ মীমাংসার জন্য চেষ্টা করতে থাকি। এদের মামলা চলমান থাকা অবস্থায় কমপক্ষে ৩০ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন। অবশেষে আমি টানা চার দিন সালিশ-বৈঠক শেষে স্থানীয়দের সহায়তায় এদের বিরোধ মীমাংসা করতে পেরেছি। এখন পরিবার দুইটি মিলে-মিশে রয়েছে।
এসব বিষয়ে জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াহিয়া আল মামুন বলেন— ‘এটি নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় ঘটনা। বিকল্পভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়টি আমাদের আইনেই আছে। অনেক সময় পুলিশ আইনের বাইরে গিয়ে সমাজের লোকজন নিয়ে এমন কাজ করে থাকে।এসআই মোহেব্বুল্লাহ কে জামালপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।এমন ঘটনা আমরা খুবই কম পেয়ে থাকি।এমন ঘটনা আমাদের ভালো লাগে। আমরা চাই না— আইনের এমন দীর্ঘসূত্রিতায় পড়ে মানুষ ভোগান্তির শিকার হোক।