জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সমালোচনা ঝড়

doinikjamalpurbarta

নিজস্ব প্রতিনিধ : জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতিতে জামালপুরে তারুণ্যের উৎসবের একটি হাডুডু খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও উপজেলা প্রশাসনকে এক কাতারে দেখা গেছে। এ নিয়ে জেলাজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

মঞ্চে থাকা ওই আওয়ামী লীগ নেতা বলছেন, তিনি ৫ আগস্টের অনেক আগেই দলটি থেকে পদত্যাগ করেছেন। আর উপজেলা প্রশাসন বলছে, তারা বিষয়টি জানত না।

সামাজিক মাধ্যমে এ সম্পর্কিত ছড়িয়ে পড়া ছবিটিতে দেখা যায়, অনুষ্ঠানের প্রথম সারিতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিন্নাত শহীদ পিংকি, জামালপুর সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন মিলন এবং তাদের পাশে বসে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল হক বাবু। অনুষ্ঠানে বক্তব্যও দিয়েছেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা।

আজ মঙ্গলবার সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হাডুডু খেলার অনুষ্ঠানে এই ঘটনা ঘটেছে।

আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল হক বাবু জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের চার বারের চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য। যদি তিনি আওয়ামী লীগের পদটি ৫ আগস্টের অনেক আগেই প্রত্যাহার করেছেন। এছাড়াও স্বতন্ত্র নির্বাচন করার জন্য দলীয় পদ থেকেও বহিষ্কার হয়েছিলেন একবার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকাল থেকে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানটিতে ১টার দিকে যোগ দেন আওয়ামী লীগ নেতা বাবু। সেখানে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর বক্তব্য দিয়ে সেখান থেকে চলে যান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অনুষ্ঠানটির সভাপতি বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমনুল করিম মোবাইল বলেন, ‘খেলা বা অনুষ্ঠানটি আমাদের বিদ্যালয়ে মাঠে হওয়ায় আমাকে অনুষ্ঠানটির সভাপতি করা হয়। কিন্তু মূলত খেলাটি পরিচালনা করেছে উপজেলা প্রশাসন, উদ্বোধন করেছে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন মিলন, আর সঞ্চালনা করেছেন ছাত্র আন্দোলনের শাকিল নামের একটি ছেলে। এখন বাবু চেয়ারম্যান কীভাবে সেখানে গিয়ে বক্তব্য দিলো, এই বিষয়টি আমি জানি না। কারণ আমি আমার স্বাগত বক্তব্য দিয়ে আমার অফিস রুমে চলে গিয়েছিলাম।’

জানতে চাইলে জামালপুর সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন মিলন বলেন, ‘আমি ওই অনুষ্ঠানের কোনো অতিথি না। আমার এলাকা তাই সেখানে গিয়েছিলাম। এখন কে, কোথায়, কার সাথে বসবে, এটা তো আমি জানি না। অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে উপজেলা প্রশাসন।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আমি মোট ৪০টি মামলার আসামি হয়েছিলাম, জেল খেটেছি। ১৬টি বছর বাড়িতে থাকতে পারিনি। তাই এখানে আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করার কোনো সুযোগ নেই।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল হক বাবু মোবাইল বলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছি। জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য পদে আমাকে রাখা হয়েছিল। আমি তখন জানতাম না। জানার পরপরই আমি সেই সময়ে এই পদ প্রত্যাহার করে চিঠি দিয়েছিলাম।

এছাড়াও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমার এলাকায় যারা মামলার শিকার হয়েছিল, আমার পকেটের টাকা খরচ করে জামিনের জন্য ৫ আগস্টের আগেই তাদেরকে উচ্চ আদালতে পাঠিয়েছিলাম। নিম্ন আদালতেও আসামি হওয়া ছাত্রদের জন্য আমি শ্রম, সময়, অর্থ ব্যয় করেছি।

৫ আগস্টের পর এখনও আমি এলাকাতেই আছি। শুধু মাত্র আমি এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছি আর জনগণ আমাকে ভালোবাসে বলে। একটি পক্ষ আমার ক্ষতি করার জন্য ষড়যন্ত্র করে আমার নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে।

জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিন্নাত শহীদ পিংকি মোবাইল বলেন, ‘তিনি (বাবু) আওয়ামী লীগ নেতা, সেই বিষয়টি আমি একদমই জানতাম না। যেহেতু আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি, তাই তার সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণা নেই। আমি কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তারা আমাকে বলেছে- তিনি স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করেছেন।

আর একটি বিষয় হচ্ছে- আমি ওই অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলাম। কিন্তু তাকে দাওয়াত করা হয়েছিল কিনা, সেই বিষয়টি আমি নিশ্চিত না। আমি যেহেতু আজ জানতে পারলাম, সেহেতু এর পর থেকে আমি তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবো।

SHARES

ফেসবুকে অনুসরণ করুন

আরো পোস্টঃ