নিজস্ব প্রতিনিধ, জামালপুর সদর উপজেলার হাজীপুর উচ্চনবিদ্যালয়ের মাঠে মরিচের হাট বসানোকে কেন্দ্র করে সদর ইউএনওর কাছে অভিযোগ দিয়েছে স্থানীরা।
গতকাল সোমবার এ অভিযোগ দায়ের করছে এলাকাবাসির পক্ষে মো. বিপুল মিয়া।
বিদ্যালয় মাঠে মরিচের হাট বসায় চারটি ক্লাস করিয়ে শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে হাট ইজারা থেকে আসা আয়ের একটি অংশ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পায় বলে অভিযোগ উঠেছে।
হাজিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ে ৭৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। চারটি পাকা ভবনের ১২টি শ্রেণিকক্ষ ও একটি অফিস কক্ষ রয়েছে। শিক্ষক আছেন ১৫ জন।
সোমবার বার উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের এই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বেলা একটার দিকে বিদ্যালয় ছুটি হয়ে গেছে।
বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক নেই। মাঠে বসেছে মরিচের হাট। চারদিকে ভিড় আর শোরগোল। শতাধিক মরিচের ক্রেতা-বিক্রেতা ব্যস্ত। পাইকারেরা মরিচ কিনে বস্তায় ভরে যানবাহনে তুলছেন। স্কুলের মূল ভবনের সামনেই একটি ট্রাকের মধ্যে মরিচ ওঠানো হচ্ছে। মাঠের কয়েকটি স্থানে বাঁশ পুঁতে মরিচের স্থায়ী দোকানও বসানো হয়েছে।
এ সময় স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতি ও সোমবার ছাড়া সপ্তাহে পাঁচ দিন হাট বসে। হাট বসার কারণে ওই পাঁচ দিন বেলা একটার মধ্যে বিদ্যালয় ছুটি হয়ে যায়। বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে মরিচের ক্রেতা-বিক্রেতারা আসেন। বেলা দুইটার মধ্যে মাঠের চারপাশ ক্রেতা-বিক্রেতায় ভরে যায়। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে কোলাহল।
স্থানীয় বাসিন্দা ও হাটসংশ্লিষ্ট দুজন ব্যক্তি বলেন,দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসছে। এটা বিদ্যালয়ের মাঠ হলেও ইজারা দিয়েছেন মেষ্টা ইউনিয়ন বিএনপি’র নেতারা
মাঠ ইজারাদার বলেন, এক বছরের জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর জন্য তাঁরা কিছু টাকা তাদের দিয়েছেন। তাঁরা শুনেছেন সেই টাকার একটি অংশ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও নেয়।
নাম প্রকাশে অচ্ছিক তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের মাঠ আমরা ইজারা দিইনি।ওই বিদ্যালয়ের আমরা কিছুই না।আমরা কীভাবে ইজারা দেব। দিলে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি দিতে পারে।’
নাম গোপন রাখার শর্তে কয়েকজন কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, দুপুর ১২টার থেকে হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা আসতে শুরু করেন। চারটি ক্লাস করিয়ে বেলা একটার মধ্যেই বিদ্যালয় ছুটি হয়ে যায়। এ কারণে কয়েক বছর ধরে তাদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। ঠিকমতো ক্লাস না হওয়ায় পরীক্ষার সময় অনেক চাপ পড়ে। এ তিন মাস তাদের অনেক অসুবিধা হয়।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, হাটের কারণে তারা ও আশপাশের ছেলেমেয়েরা মাঠে খেলাধুলা করতে পারছে না। সকালেও মাঠে খেলার উপায় নেই। কারণ মাঠের চারদিকে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে। সেখান থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। ক্লাসের সময় তাদের অসুবিধা হয়।
কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করেন, হাটের কারণে তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা হচ্ছে না। এত দিন ধরে হাটটি চলছে। এটা বন্ধে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।
প্রধান শিক্ষক সাজেদুল হক বলেন, এই এলাকায় হাটের জন্য জায়গা না থাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ী মহলের দাবিতে হাট বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়। হাট ইজারার কিছু টাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়ন খাতে খরচ করা হয়। বেলা একটার মধ্যে বিদ্যালয় ছুটি হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কয়েকজন শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় রুটিনমাফিক ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে তাড়াতাড়ি বিদ্যালয় ছুটি হয়ে যায়।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি নাজমুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
জামালপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন বলেন, বিদ্যালয় মাঠে হাটের বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জামালপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয় অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।