নিজস্ব প্রতিবেদক: জামালপুরে সিকদার গ্রুপের মুতিয়ার পাওয়ার প্যাক কোম্পানীর ১০০ মেগওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে (পাওয়ার প্লান্ট) এ রহস্যজনক ডাকাতির ঘটনায় নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে জেলা জুড়ে৷ কেউ বলছেন, ডাকাতির নামে নাটক সাজিয়ে কর্মকর্তারাই সকল অর্থ আত্মসাৎ করেছে ।
উৎপাদন বন্ধ থাকলেও পাওয়ার প্লানটিতে জোড়ালো নিরাপত্তার মধ্যে সন্ধ্যা থেকেই ভোর রাত পর্যন্ত ডাকাতি অনেকটা রুপকার গল্পের মতো। ডাকাতির কৌশল সাজিয়ে সুবিধা ভোগ করার ফন্দি এই নিয়েও বলাবলি চলছে।
জানা যায় , জামালপুরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শিকদার গ্রুপের ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্র পাওয়ার প্যাক মতিয়ারায় ২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ১ মার্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন। জ্বালানি সংকটে গত ২০২২ সালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। উৎপাদন বন্ধ থাকলেও পাওয়ার প্লানটিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল খুবই জোড়ালো।
পাকা দেয়াল, কাঁটাতারের বেড়া, সিসিটিভি ক্যামেরা ও ১৫ জন আনসার সদস্য ও ৭জন কর্মকর্তা কর্মচারীর কড়া পাহারা থাকতো সর্বদা। পাওয়ার প্লান্ট এলাকায় প্রবেশ করতে প্রথম ধাপে পকেট গেটে আনসার সদস্যদের কাছে নিজের পরিচয় প্রদান করতে হয় ।
এরপর আনসার সদস্যরা প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে। তারপর আগত ব্যক্তির পরিচয় পাওয়ার পর সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে তাকে সনাক্ত করার পর কর্মকর্তারা ওই ব্যক্তিকে তাদের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দেন। অনুমতি পেয়ে আগত ব্যক্তি তার নাম ঠিকানাসহ যাবতীয় পরিতিচি খাতায় লিপিবদ্ধ করে গেটের ভিতরে প্রবেশ করেন।
এরপর আগত ব্যক্তির গতিবিধি ২৭ টি সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা পর্যবেক্ষণ করেন সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
জেলার সচেতন মহল মনে করেন, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কয়েকস্তরের নিরাপত্তা বলয় পেরিয়ে সন্ধ্যা থেকেই ডাকাতি অনেকটা রুপকার গল্পের মতো।
জামালপুর-শেরপুর মহাসড়ক সংলগ্ন এমন জায়গায় কি করে ডাকতরা গেট দিয়ে প্রবেশ করলো? শুধু তাই নয়, আধুনিক এ যুগে ২২ জন নিরাপত্তা কর্মীর কেউ তাদের কর্মকর্তা কিংবা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেনি কেন? ডাকাত বের হয়ে এতো কোটি কোটি টাকার মালামাল নিয়ে গেল কিভাবে? আর ডাকাতরা যদি ডাকাতি করে তাহলে কোটি কোটি টাকার মালামাল কোন গাড়ী নিয়ে গেল? আশ পাশের ব্যবসায়ীরা কেউ বুঝতেই পারল না কেন?
আশ পাশের অনেক দোকান খোলা ছিল তারাও তো বুঝতে পারল না কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে এই দুর্ধষ ডাকাতির সাথে ওই প্রতিষ্ঠানের কারো সংশ্লিষ্টতা কিংবা গভীর চক্রান্তের গন্ধ চলে আসে।
আসলে এটা ডাকাতি নাকি ডাকাতির ঘটনা সাঁজিয়ে কর্মকর্তারা অর্থ আত্মসাৎ করে এমন ঘটনা সাজানো হয়েছে কিনা এর সঠিক তদন্তের দাবী জানিয়েছে সচেতন মহল ৷
এ ডাকাতির সাথে প্রতিষ্ঠানের কেউ জড়িত রয়েছে কিনা বিষয়টির সঠিক তদন্তের দাবী জানান সচেতন মহল।
এ বিষয়ে আনসারের পিসি দেলোয়ার হোসেন জানান , আমি নতুন যোগদান করেছি । আমি তেমন কিছু জানি না । ডাকাতি হয়েছে এমন কথা শুনেছি । আগের যারা ছিল সবাই বদলী করে দিয়েছে৷
এদিকে ডাকাতদের হাতে আহত হয়েছে বলে দাবী করে মোঃ নাজমুল হাসান নিহান জানান , হঠাৎ ডাকাতরা ভিতরে প্রবেশ করে আনসার সদস্যদের বেধে ফেলে । পরে আমাদের চোখ হাত বেধে একটি ভবনে নিয়ে যায় । সেখানে আমাদের মারধুর করেছিল ।
আমাদের মোবাইল গুলো সব কিছু তারা নিয়ে ছাদের ওপর রেখে গিয়েছিল। তবে ২ টি নতুন মোবাইল তারা নিয়ে গেছে৷
ডাকাতির বিষয় নিয়ে প্ল্যান্টের ম্যানেজার (প্রশাসন) মো: রফিকুল ইসলাম শুক্রবার এ প্রতিবেদককে জানান, প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে আনসার সদস্যরা।
আনসার সদস্যদের অস্ত্র ও পোশাক জাতীয় সমস্যার কারণে জমা থাকায় সেদিন আনসাররা সিভিলে নিরাপত্তায় ছিলো। এটা ডাকাতির নাটক সাজানো হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি আরো বলেন, পুলিশ তদন্ত করছে।
পুলিশের তদন্তে যদি আমাদের বা অফিসের কেউ জড়িত থাকে অবশ্যই পুলিশ ব্যবস্থা নিবে।
ম্যানেজার আলমগীর হোসেন মুঠোফোনে জানান, ৪ সেপ্টেম্বর পাওয়ার প্লান্টে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে একদল ডাকাত অস্ত্রের মুখে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের হাত-পা বেঁধে ফেলে।
এরপর প্লান্টের ভেতরে কর্মরত প্রকৌশলী ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একটি ভবনে আটকে রাখে ভাংচুর এবং প্রায় ছয় কোটি টাকার নতুন কেবল সহ বিভিন্ন মালামাল ডাকাতি করে ফযর নামাযের আগে চলে যায় ।
ভোরে ডাকাতরা চলে গেলে শিফট ইঞ্জিনিয়ার ফয়সাল হক ভোর ৫ টায় আমাকে অবগত করেন। ঘটনার পর পরই সংবাদ পেয়ে পুলিশ, র্যাব,সেনাবাহিনী সহ সকল গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ।
সংবাদ পেয়ে পাওয়ার প্লান্টের হেড অফিসের পাওয়ার ডিভিশনের ইঞ্জিনিয়ার সোহেল রানা, ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার হোসেন, একাউন্স ম্যানেজার নাসির উদ্দিন সহ ৪ জনের একটি টিম পরিদর্শনে আসেন।
সেদিনই আমি বাদী হয়ে মামলা করেছি। ৫ অক্টোবর বীমা কোম্পানির লোক এসেছিল। জোরালো তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত ডাকাতদের গ্রেফতারের দাবী জানাই ।
৯ অক্টোবর বুধবার বিকাল ৪ টায় জামালপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ফয়সাল মো. আতিক জানান, মামলা হয়েছে ৷ তদন্ত চলছে। আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে৷