হাসির কাছে হার মানে পূর্ণিমার চাঁদের আলো

doinikjamalpurbarta

নিজস্ব প্রতিবেদক দৈনিক জামালপুর বার্তা :

পৃথিবীর বুকে যত ভাষার যত শব্দ আছে, ভালোবাসার সুরে সবচেয়ে বেশি ধ্বনিত হওয়া শব্দটি ‘মা’। নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পূর্ণতা পায় ‘মা’ নামক শব্দটিতে।

আমি আমার মায়ের কাছে ঋণী। পৃথিবীর রূপ দেখার আগে তিনি আমাকে ১০ মাস ১০ দিনের আরেকটি পৃথিবীর মুখ দেখিয়েছেন। আকৃতিতে পৃথিবী ছোট হলেও মানের দিকে হাজার কোটি গুণ বড়। সেই পৃথিবীতে ফোটে আমার চোখ, যে চোখে এ সুন্দর পৃথিবী দেখি। সেই পৃথিবীতে তৈরি হয়েছিল আমার হাত-পা, যার মাধ্যমে বিশ্ব বিচার করি। সেই পৃথিবীতে আমার দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি হয়ে আমাকে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের আকৃতি দিয়েছে। প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বৃদ্ধির সঙ্গে আমি মায়ের গর্ভ ভারী করেছি। হাত-পা তৈরি হওয়ার পর মায়ের পেটে কত লাথি দিয়েছি। নাড়িভুঁড়িতে টান লেগেছে মায়ের। দাঁত কামড়ে ব্যথা সহ্য করেছেন। রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। ১০ মাস ১০ দিনের এ পৃথিবীর এমন ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখাকে সংজ্ঞায়িত করার কোনো ভাষা আমার জানা নেই। যত্নমাখা সেই পৃথিবী থেকে বিশাল রঙিন এ বিশ্বের আলো–বাতাস দেখানোর জন্য ‘মা’ মৃত্যু সামনে থেকে দেখে প্রসববেদনা সহ্য করেছেন।

আমার মুখ দেখে অতীতের সব ব্যথা ভুলে যান মুহূর্তে। দুই বছর নিজের স্তনের দুধ পান করিয়েছেন। বুঝতে দেননি কখনো গরমের তীব্রতা কিংবা শীতের আর্দ্রতা। তখনো আমি মুখ ফুটে কথা বলতে পারি না। কিন্তু আমার ইশারা আর কান্নার ধরন দেখে বুঝে নিয়ে সব চাহিদা পূরণ করেছেন। নিজে খেয়ে না খেয়ে আমাকে খাইয়েছেন।

২০২৩ সালে আমি মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলাম। প্রায় এক মাস হাসপাতালে ছিলাম। এটি আমার জীবনের দুরন্ত চঞ্চলতা স্তব্ধ করলেও সেই ব্যথা বুঝতে দেয়নি পরিবার। মা প্রতিটি মুহূর্তে আমার খবর নিয়েছেন।

ছোটবেলা থেকে হাতে–কলমে শিক্ষা দিয়েছেন। সংসারের সব কাজের মধ্যে যত্ন নিতে কখনো কার্পণ্য করেননি তিনি। আদরের যেমন কমতি রাখেননি, তেমনি কঠিন অনুশাসনের মধ্যে বড় করেছেন। সত্য কথা বলা, মানুষকে সম্মান করা, কারও ক্ষতি না করা সর্বোপরি সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজকে নিরুৎসাহিত করেন আমার মা। কোনো খারাপ বন্ধুর সঙ্গ দেয়ার সুযোগই দেননি। আমার সুখে সুখী আর দুঃখে দুঃখী হয়েছেন।

লেখা-পড়া শেষে যখন চাকুরিতে ছিলাম শত ব্যস্ততার মধ্যেও মাকে প্রতিদিন ফোন দিয়ে ‘কেমন আছ, মা?’ বলতে পারা মরুভূমির বুকে তৃষ্ণা মেটানোর পানির মতো মনে হয়। আমি আমার জীবনের সব সফলতা আমার মাকে উৎসর্গ করতে চাই। পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্বের কোনো সিংহাসন থাকলে, আমার মা সেই সিংহাসনের সবচেয়ে যোগ্যতম। মায়ের হাসির কাছে হার মানে পূর্ণিমার চাঁদের উজ্জ্বলতা। মা আমার সফলতা, আমার অনুপ্রেরণা, আমার বেহেশত। আমি জানি, মা এই লেখা পড়বে। তাই না বলা একটি বাক্য তোমার উদ্দেশে—‘আমি তোমাকে ভালোবাসি মা।

SHARES

ফেসবুকে অনুসরণ করুন

আরো পোস্টঃ