রেজাউল করিম রাজু, শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি ইউনিয়ন গুলো ছাড়াও নদী তীরবর্তী অন্য ইউনিয়ন ও নিম্নাঞ্চলের ইউনিয়ন গুলো বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়ে পড়ে। শুক্রবার রাত থেকে পাহাড়ি নদীগুলোতে পানির তীব্রতা কিছুটা কমে এলেও ভাটি অঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করে। সবমিলিয়ে অন্তত ১০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয় নালিতাবাড়ী উপজেলার। পাশাপাশি পানিতে নিমজ্জিত আছে সবজি-ক্ষেত সহ চলতি আমন ধানের মাঠ।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের অভয়পুর গ্রামের বাছির উদ্দিনের ছেলে হাতেম আলী (৩০) ও সহোদর আলমগীর (১৬) চেল্লাখালী নদীর ভেঙে যাওয়া পানির স্রোতে নিখোঁজ হয়। পরে (শনিবার) পানি কিছুটা কমে আসায় বিকেলে নন্নী কুতুবাকুড়া গ্রামের ধান খেত থেকে ওই দুই সহোদরের লাশ উদ্ধার করা হয়। একইভাবে শুক্রবার বন্যার পানিতে ডুবে মারা যান উপজেলার বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী ওমিজা বেগম। একই দিন সন্ধ্যায় নয়াবিল ইউনিয়নের খলিসাকুড়া গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে মারা যান বৃদ্ধ ইদ্রিস আলী। এছাড়া আরো একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও এখনো পর্যন্ত তার নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আরো একজন। হাজার-হাজার একর জমির ফসল পানিতে ডুবন্ত রয়েছে। উপজেলার অধিকাংশ পুকুরের মাছ ভেসেগেছে।
বর্তমানে চিকিৎসা, খাদ্য ও আবাসন সংকটে অনেকে নারী ও শিশুদের নিয়ে অবর্ননীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এদিকে বানভাসি মানুষকে উদ্ধারে শুক্রবার থেকেই কাজ করছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো।
শনিবার দিনভর স্পীটবোড, নৌকা, ভেলা, টিউব ইত্যাদি নিয়ে চলে বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধার অভিযান। পানির তোড়ে অনেকের বাড়ীঘর ভেসেগেছে। এখনো অনেকে পানিবন্দি রয়েছেন।
এছাড়াও শুকনা খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে বানভাসীদের মাঝে। এসব কাজে অংশ নিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা বিএনপি, ছাত্র শিবির, ইসনাফ, নন্নী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আলহাজ একে এম মাহবুবুর রহমান রিটনসহ বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন।
এদিকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত নিম্নাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে দেখা গেছে। গবাদী পশুসহ কেউ আত্মীয় বাড়ি আবার কেউ বা ছুটেছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। উপজেলার কয়েকটি প্রধান সড়ক পানির স্রোতে ভেঙ্গে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এলাকার সচেতন মহল দ্রুত উর্ধ্বতন প্রশাসনসহ দেশের বিত্তবানদের বানভাসী ও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন।