নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক জামালপুর বার্তা : জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিন দশকেরও অধিক সময় ধরে রোগীদের খাদ্য ও পথ্য সরবরাহ করে আসছে আব্দুল কদ্দুস (মেসার্স কদ্দুস এন্টারপ্রাইজ) নামে এক ঠিকাদার।
অদৃশ্য অপশক্তির কারণে বারবার কার্যাদেশ হাতিয়ে নেন তিনি। তার বিরুদ্ধে নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ ও হিসাবে গোঁজামিল দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ থাকলেও মেসার্স কদ্দুস এন্টারপ্রাইজ সরকারের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এবারও খাদ্য সরবরাহের কার্যাদেশ হাতিয়ে নিতে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স খাদ্য ও পথ্য সরবরাহ, স্টেশনারী ও লিলেন সামগ্রী ধৌতকরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে একই বিজ্ঞপ্তিতে তিনটি কাজের দরপত্র আহ্বান করে।
নিয়মানুযায়ী বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র ক্রয় শেষে গত ২২ অক্টোবর দরপত্র বাক্স খোলা হয়। খাদ্য ও পথ্য সরবরাহ দরপত্র বিক্রি হয় ১৮টি, জমা পড়ে ১৬টি। এরমধ্যে বাদ পড়ে ৬টি। শর্তানুযায়ী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বর্তমান বাজার দর অনুসারে সর্বনিম্ন দরদাতাকে দরপত্রের কার্যাদেশ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।
এদিকে খাদ্য ও পথ্য সরবরাহের দরপত্র হাতিয়ে নিতে ঠিকাদার মেসার্স কদ্দুস এন্টারপ্রাইজ (আব্দুল কদ্দুস) সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়ার জন্য বর্তমান বাজার দর উপেক্ষা করে দাম উল্লেখ করেছেন।
সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স কদ্দুস এন্টারপ্রাইজ নিজের নামে ১৯৮১ টাকা এবং তার ছেলে মেসার্স একতা এন্টারপ্রাইজ (প্রোঃ লিমন মিয়া) নামে ২০০০ টাকা উল্লেখ করে একাই দু’টি দরপত্র জমা দেন। বর্তমান বাজার দরের চেয়েও অনেক কম দাম উল্লেখ করায় তা জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে চাহিদার চেয়েও অনেক কম টাকায় কীভাবে খাদ্য ও পথ্য সরবরাহ করবেন এবং সেগুলো আদৌ গুণগতমান ঠিক থাকবে কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার জানান, আব্দুল কদ্দুস দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সরিষাবাড়ী হাসপাতালে খাদ্য ও পথ্য সরবরাহের ঠিকাদারি করেছেন।
কখনও নিজের নামে এবং কখনও অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়ে কার্যাদেশ হাতিয়ে নেন। পূর্বের ন্যায় এবারও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নানা তদবির ও কুটকৌশলে কাজ বাগিয়ে নেয়ার ফন্দি করছেন কদ্দুস এন্টার প্রাইজ।
নিম্নমানের খাদ্য, পথ্য সরবরাহ এবং রোগীর সংখ্যা বেশি দেখিয়ে ও সকালে ছাড় হয়া রোগী দুপুর এবং রাতের তালিকায় দেখিয়ে, হিসাব গড়মিল করে কাজ সম্পাদন করেন তিনি।
কাগজেকলমে প্রতিবার সর্বনিম্ন দরদাতা এবং কাজে লোকসান দেখালেও হাসপাতালের অসাধু কর্মচারীদের যোগসাজশে নানা অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল (কোটি টাকা) অংকের টাকা অদ্যবধী হাতিয়ে নিয়েছেন। এবারও কাজ পেতে নানাভাবে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান তার প্রতিপক্ষ ঠিকাদারগণ।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ঠিকাদার আব্দুল কদ্দুস মুঠোফোনে বলেন, আমি দাম কম দিয়েছি, কীভাবে কাজ করবো সেটা আমার ব্যাপার। আমি পারবো না, পারবে কে?
এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রবিউল ইসলাম বলেন, নিয়মানুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা কার্যাদেশ পাবেন।
তবে বিজ্ঞপ্তির ১৫ নম্বর ক্রমিকে উল্লেখ আছে যে, বর্তমান বাজার দরের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ দর উল্লেখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা হলেও দরপত্র কমিটি তা গ্রহণ করতে বাধ্য নয়।
সুতরাং কার্যাদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।