রেজাউল করিম রাজু, শেরপুর জেলা প্রতিনিধি:
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হয়ে গেছে। এর মাঝে মানুষের জীবনযাত্রার মানে পরিবর্তন এলেও, একটি পাকা সড়কের অভাবে দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে দুর্ভোগে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার ৫ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। বর্ষায় কাদা, শুকনায় ধুলোমাটি। এর মাঝেও প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে ছুটতে হয় সবাইকে গন্তব্যে। বিষয়টি নিয়ে নেই কারো মাথাব্যাথা।
শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহনিয়া ইউনিয়নের মিয়াপাড়া থেকে পাশ্ববর্তী খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের মাদারপুর পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়কের এই দুরবস্থা ।স্থানীয়রা বলছেন, এই রাস্তায় পিচঢালা পথের দীর্ঘদিনের দাবি হলেও স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও তা জোটেনি তাদের ভাগ্যে। এমনকি কাঁচা রাস্তাও সংস্কার হয়নি অনেক বছর।এই অঞ্চলে ৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকার পরেও চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকার ৫ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, শুকনো মৌসুমে কোনমতে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা গেলেও বর্ষার সময় রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বয়স্ক মানুষ রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছে।আহত হয়েছেন অনেক।আহত হওয়ার ভয়ে কেউ এই রাস্তা দিয়ে চলাচলই করতে চায় না। কিন্তু আমাদের কোনো উপায় না থাকায় কষ্ট করে চলাচল করতে হয়।
স্থানীয় শিক্ষার্থী মো. ইসলাম মিয়া বলেন, আমারা প্রতিদিন কলেজে যায়, রাস্তা পাকা না থাকার কারণে কোনো গাড়ি চলাচল করতে চায় না। প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে আমাদের কলেজে যেতে হচ্ছে। তার উপরে বর্ষা মৌসুম আসলেই চলাচল করা খুব বিপদজনক হয়ে যায়। অনেকেই পিছলে পড়ে যায় রাস্তাতে। আমাদের দাবি সরকার যেন রাস্তাটি করে দিয়ে আমাদের পড়াশোনা করার সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করে দেয়।
স্থানীয়রা বলেন, আমরা সবাই খুব কষ্টে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে আসছি। এটি পাকা করা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি, কিন্তু বিষয়টি কেউ নজরে নিচ্ছে না। আমাদের এখানে কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্সতো দূরের কথা, ইজিবাইকও (অটো) আসতে চায় না। তবে কয়েকবার বেশ কয়েকজনকে রাস্তা মাপতে দেখা গেলেও, আজও তা দৃশ্যমান হয়নি।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, আমাদের এই এলাকাগুলোতে কৃষি জমির পরিমাণ অনেক বেশি। আমাদের ফসল উৎপাদন করে বাজারে নিতে হিমশিম খেতে হয়। কোন পাইকার এলাকায় এসে ফসল কিনতে চাইনা শুধু মাত্র রাস্তা খারাপ থাকার কারণে।কেউ কেউ আসলেও ফসলের মূল্য কম দিতে চাই । আমাদের এই রাস্তাটা সরকার পাকা করে দিলে আমারা ন্যায্য মূল্য পাবো ফসলের।আর ন্যায্য মূল্য পেলে ফসল ফলাতে আরো আগ্ৰহী হয়ে উঠবো।
এদিকে অটোরিকশা চালকরা বলেন, এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে খুবই কষ্ট। যতবার এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করি ততবার একটা না একটা গাড়ির সমস্যা হয়। গাড়ির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি তাই শুকনা সময় ছাড়া এই রাস্তা দিয়ে আমরা যাত্রী নেই না। রাস্তা পাকা করলে আমরা সব সময় গাড়ি নিয়ে যাবো এই রাস্তায়।
স্থানীয়রা বলছেন, একাধিকবার জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও রাস্তার কাজ হয়নি এখনো । জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে এই যে মাপজোক হবে, ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের প্রক্রিয়া করা হয়েছে দাবি করলেও তা শুধু মুখেই সীমাবদ্ধ ছিল।কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
কুড়িকাহনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ খান নুন বলেন, আমি বিগত সময় যখন চেয়ারম্যান ছিলাম তখনি এমপি মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে এই রাস্তা পাকা করার জন্য অনুরোধ করেছি। এখন চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় আমি বারবার এই রাস্তা চেয়েছি কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত এর কোন সূরাহা দেখতে পাচ্ছি না। আমার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তো আর এত বড় রাস্তা করা যায় না। আমার সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে আমার এলাকার এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি যেন সরকার দ্রুত করে দেয়।
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী এলজিইডির প্রকৌশলী মশিউর রহমান বলেন, আগের একটি প্রকল্প ছিল যা এমপি মহোদয়ের ডিও লেটারের মাধ্যমে হতো। ৫ ই আগষ্ট এর পরে এই প্রকল্প টি আর এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি।তাই রাস্তার কাজ ও আলোর মুখ দেখেনি।রাস্তাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।এই রাস্তা পাকা করতে গেলে বড় প্রকল্পের প্রয়োজন। সামনে সরকার যদি প্রকল্প দেয় তাহলে অবশ্যই আমরা এই রাস্তাটি পাকা করে দিবো।