নিজস্ব প্রতিবেদক : কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনের গ্রামের বাড়িতে এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজমের বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ওইসব বাড়িতে আগুন ও ভাঙচুর করা হয়। বকশিগঞ্জের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে এবং স্থাপনার সামনে নির্মাণ করা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে।
জামালপুর শহরের বকুলতলা এলাকায় অবস্থিত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজমের পরিত্যক্ত বাড়িতে আবারও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ৫ আগস্টের পর এই বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাটের পর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
মেহের আফরোজ শাওনের বাবা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলীর এই বাড়িটি তার পারিবারিক সম্পত্তি। শাওনের বাবা জামালপুর-৫ (সদর) আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তবে তিনি দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেননি।
তার স্ত্রী বেগম তহুরা আলী ১৯৯৬-২০০১ ও ২০০৯-২০১৪ মেয়াদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। শাওন নিজেও আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। ওই বাড়িতে পরিবারের কেউ ছিলেন না। তবে মাঝেমধ্যে ওই বাড়িতে তাঁর বাবা আসতেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার একটু আগে শহরের নরুন্দি বাজার এলাকায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার একটি মিছিল বের হয়।
ওই মিছিল বাজারের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর নরুন্দি রেলস্টেশন এলাকায় অবস্থিত মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে প্রথমে ইটপাটকেল ও ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী জাহাঙ্গীর আলম জানান, নরুন্দি বাজারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হওয়ার পর কিছু বিক্ষোভকারী শাওনের বাবার বাড়ির সামনে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সম্প্রতি শাওনের রাজনৈতিক অবস্থান ও কিছু মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা তার পরিবারের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে এবং বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী ও সাবেক সংসদ সদস্য তহুরা আলীর গ্রামের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় একদল ছাত্রজনতা। অভিনেত্রী শাওন মোহাম্মদ আলী ও তহুরা আলী দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে বড়।
এ দিকে সন্ধ্যা সাতটার দিকে একদল বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা প্রথমে মির্জা আজমের পরিত্যক্ত ভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর শুরু করেন। এর একপর্যায়ে ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এ সময় উপস্থিত বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও মির্জা আজমের বিরুদ্ধে নানা রকম স্লোগান দেন। পরে ভবন ভাঙার জন্য এক্সকাভেটর আনা হয় কিন্তু ভবন আর ভাঙা হয়নি। পরে এক্সকাভেটর চলে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ।
সেখানে উপস্থিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক মীর ইসহাক হাসান বলেন, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ওই বাড়িতে আগুন দিয়েছেন। ভারতের মদদে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভাষণ দিয়েছেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় দেশব্যাপী বিক্ষুব্ধ জনতা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। জামালপুর জেলা যাতে অস্থিতিশীল না হয়, সে জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এখানে এসে উপস্থিত হয়েছেন। আগুন নেভানোর জন্য চেষ্টা করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে পৌঁছে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও অগ্নিসংযোগের পেছনের প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নরুন্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবায়দুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিকেলে একদল ছাত্রজনতা অভিনেত্রী শাওনের বাবা মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে বকশিগঞ্জের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে এবং স্থাপনার সামনে নির্মাণ করা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৩.০০ ঘটিকার সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা , বকশিগঞ্জ এন এম হাই স্কুল মাঠে সমবেত হয়ে একটি মিছিল সহকারে বকশিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল ভাঙচুর করে।
ছাত্র অধিকার পরিষদ জামালপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সা’আদ আহমেদ রাজু বলেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ লুটপাট করে তাদের পারিবারিক কাজে ব্যবহার করেছে সরকারি কোষাগারের অর্থ অপচয় করে বিভিন্ন জায়গায় ম্যুরাল ভাস্কর মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছে। এখন আমরা এই ম্যুরাল ভাস্কর মূর্তি ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার করছি।
গণঅধিকার পরিষদ জামালপুর জেলা শাখার সহ-সভাপতি শাহরিয়ার সুমন বলেন, আওয়ামী লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না।
ছাত্র জনতা ম্যুরাল ভাঙগার মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পরেও ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে এ অপতৎপরতা দেশের ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না।
পরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা মিছিল সহকারে বকশিগঞ্জ সরকারি কিয়ামত উল্লাহ কলেজের মূল ফটকের সামনে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙ্গে ফেলে। এছাড়াও উপজেলা কমপ্লেক্সের ভিতরে স্থাপিত ‘মুজিব’ ম্যুরালও ভাঙচুর করা হয়।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ফয়সল মো. আতিকের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।