নিজস্ব প্রতিবেদক : অষ্টম শ্রেণি শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করার অভিযোগে জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে জাহিদুল ইসলাম (২৩) নামের যুবককে গ্রেফতার করেছে জামালপুর জেলা ডিবি পুলিশ । শনিবার সকালে তাকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জামালপুর ডিবির ওসি মো: নাজমুস সাকিব জানিয়েছেন ।
স্থানীয় ও পুলিশ,হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ মাস পূর্বে জাহিদুলদের বাড়ীতে তার চাচাত বোন ধর্ষিতা শিক্ষার্থী গেলে সে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। জাহিদুল ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে একাধিক বার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষন করে। ধর্ষিতা শিক্ষার্থী ভয়ে কাউকে কিছু জানায়নি। এদিকে অন্তসত্বা হয়ে পড়ে। এভাবে ০৭ মাস অতিবাহিত হবার পর শিক্ষার্থী বিষয়টি ধর্ষক জাহিদুলকে জানালে জাহিদুল ভিকটিমের গর্ভের সন্তানটি নষ্ট করার জন্য চাপ দিতে থাকে এবং সুকৌশলে তার বোন সুবর্না (১৭) কে দিয়ে গর্ভপাত করা ঔষধসহ বাদীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। সুবর্না (১৭) অন্তসত্তা ভিকটিমকে কৌশলে ঔষধ খাইয়ে দিলে গত ১১ এপ্রিল শুক্রবার সকালে সে একটি মৃত ছেলে সন্তান প্রসবের সংবাদ এলাকার মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে চাঞ্চল্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয় । সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃত শিশুর সুরতহাল শনাক্ত করে থানায় নিয়ে আসে এবং প্রসবিত অসুস্থ ওই শিক্ষার্থীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করান। পরদিন ১২ এপ্রিল শনিবার শিক্ষার্থীর পিতা সোহেল মিয়া থানায় গিয়ে জাহিদুলকে প্রধান আসামী করে ২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এদিকে ধর্ষক জাহিদুল ইসলাম ও পরিবারের লোকজন গা ডাকা দিয়েছেন। এদিকে পরদিন শিক্ষার্থীর অবস্থা অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করলে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক শিক্ষার্থীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।বর্তমানে সেখানে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে । এদিকে মামলা দায়েরের পর থেকেই জামালপুর পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ পুলিশ সুপার (সদর সার্কেলের নির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ওসি মো: নাজমুস সাকিব এর তত্ত্বাবধানে ডিবি পুলিশের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে । অন্যদিকে সোর্স ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামীর অবস্থান নিশ্চিত করে এসআই মোঃ আসাদুজ্জামান, এসআই মো: আতিকুর রহমান এবং এসআই মো: আব্দুল্লাহ আল আজাদ এর নেতৃত্বে দীর্ঘ ১৩ ঘন্টা অভিযান পরিচালনা করে শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার টাওয়ার মার্কেট এলাকায় মো: খোকন এর বাড়ি থেকে ধর্ষক মো: জাহিদুলকে গ্রেফতার করে জামালপুর ডিবি পুলিশ ।
অষ্টম শ্রেণি শিক্ষার্থীর বাবা সোহেল জানান, আমি থানায় মামলা করেছি। মেয়েটি এখনো মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। ডিবি পুলিশ আসামী গ্রেফতার করেছে। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।
এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ চাঁদ মিয়া বলেন,সরিষাবাড়ী থানায় গত ১২ এপ্রিল শিক্ষার্থীর পিতা সোহেল বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে।
এদিকে জামালপুর ডিবির ওসি মো: নাজমুস সাকিব জানান, বিষয়টি নিয়ে ডিবি পুলিশ ছায়া তদন্ত শুরু করে ধর্ষককে গ্রেফতার করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে । তাকে গ্রেফতারের পর বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এই সাফল্যের পেছনে ছিল জামালপুর জেলা গোয়েন্দা শাখার পুলিশ সদস্যদের পেশাদারিত্ব, প্রযুক্তিনির্ভর গোয়েন্দা কাজ এবং জনগণের সহযোগিতা বলে জানিয়ে জামালপুর পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম পিপিএম-সেবা জানান, জামালপুরের সরিষাবাড়িতে সংঘটিত ধর্ষনের ঘটনা আমাদের সমাজে অপরাধের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেয়। ধর্ষনের ঘটনার পরপরই আমরা প্রয়োজনীয় তদন্ত ও গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করি। আসামী অত্যন্ত চতুর প্রকৃতির হলেও মাত্র ০৭ দিনের মধ্যেই আমরা মূল আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। যা জামালপুর জেলা পুলিশের প্রতিশ্রুতি ও দায়বদ্ধতার একটি জীবন্ত প্রমাণ। তিনি আরো জানান,আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে জামালপুর জেলা পুলিশ সদা সতর্ক ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।আমি বিশ্বাস করি, এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার।।