প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা তুলে আত্মসাৎ অভিযোগ মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে

doinikjamalpurbarta

নিজস্ব  প্রতিবেদক : জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে হত-দরিদ্র নারীদের দর্জি প্রশিক্ষণের ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৮০০ টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি এ বিষয়ে রুবিনা নামে একজন প্রশিক্ষণার্থী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগের পর রোববার (০৪ মে) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাদির শাহ উপজেলা পল্লি উন্নয়ন কর্মকর্তা রুহুল আমিনকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। এ তদন্ত কমিটিকে আগামী ১৪ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

মহিলা বিষয়ক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এক সপ্তাহ যাবৎ ওই অফিস সহকারী মোশারফ হোসেন অফিস করেন না। কোনো প্রকার ছুটি ছাড়াই অফিস করছেন না বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাদারগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শায়লা নাজনীন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে দ্বিতীয় ব্যাচে অক্টোবর/২৪ থেকে ডিসেম্বর/২৪ পর্যন্ত ৩০ জন হত দরিদ্র নারী প্রশিক্ষণ করেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার সপ্তাহের মধ্যে ভাতা হিসেবে ৬ হাজার ৩০০ টাকা করে পাবেন।

কিন্তু অফিস সহকারী মোশারফ হোসেন ব্যাচ শুরু হওয়ার আগেই ৩০ জনের ১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। এরপর সেই টাকা ২১ জন প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে মোটে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩০০ টাকা বিতরণ করে বাকী ৯ প্রশিক্ষণার্থীর ৫৭ হাজার ৭০০ টাকা আত্মসাৎ করেন।

 

একইভাবে এর আগে ১ম ব্যাচ জুলাই/২৪ থেকে সেপ্টেম্বর/২৪ ব্যাচেরও ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থীর ভাতা উত্তোলন করে ২৩ জনের মাঝে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯০০ টাকা বিতরণ করে বাকী ৭ জনের ৪৪ হাজার ১০০ টাকা আত্মসাৎ করেন। তৃতীয় ব্যাচ ৩১ মার্চ/২০২৫ শেষ হয়ে মাস পেরিয়ে গেলেও প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা পরিশোধ করেননি তিনি। ৩য় ব্যাচ ও ৪র্থ ব্যাচ শুরু হওয়ার অনেক আগেই ৬০ জন প্রশিক্ষণার্থীর ৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ২০২৪ সালের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন মোশারফ হোসেন।

টাকা আত্মসাৎ করে সম্প্রতি লাপাত্তা হয়েছেন তিনি। আসছেন না অফিসে। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ।

প্রশিক্ষণ করেও ভাতা না পাওয়ায় কনা বেগম নামে এক প্রশিক্ষণার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সংসারের কাজ ও বাচ্চা রেখে এসে প্রশিক্ষণ করেছি। অথচ এখন ভাতা পাচ্ছি না। অফিসের মোশারফ স্যার আমাদের ভাতা উত্তোলন করে পালিয়েছেন।

সুমাইয়া পারভীন নামে আরেক প্রশিক্ষণার্থী বলেন, ৩ মাস কষ্ট করে ট্রেনিং করেছি। অফিসের মোশারফ স্যার আমার অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য কাগজপত্রও নিয়েছে তবুও আমরা টাকা পাচ্ছি না। আমরা অনেকদিন ধরে অফিসে আসতেছি। আমরা দূর থেকে গাড়ি ভাড়া খরচ করে অফিসে এসে টাকা না পেয়েই ফেরত যাচ্ছি। মোশারফ স্যার আমাদের ভাতার টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছে। আমরা তার বিচার চাই।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের অভিযুক্ত অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোশারফ হোসেনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শায়লা নাজনীন বলেন, এ বিষয়ে ইউএনও স্যার যেহেতু একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনের পর মন্তব্য করবো।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাদির শাহ নাদির বলেন, এ বিষয়ে ৩ সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি রিপোর্ট পেশ করার পর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

SHARES

ফেসবুকে অনুসরণ করুন

আরো পোস্টঃ