ইমরান সরকার স্টাফ রিপোর্টার: জামালপুরের বকশীগঞ্জে উলফাতুননেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাথী আক্তার (আলো) ছয়তলা ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা নিটোর (জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান)-এ চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত ছয়দিন ধরে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।এই ঘটনা ঘিরে উপজেলা জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। অভিভাবক, শিক্ষক, সহপাঠী ও এলাকাবাসীর মাঝে প্রশ্ন উঠেছে—একজন শিক্ষার্থীর এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের পেছনে কে বা কারা দায়ী? অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় তিন মাস আগে বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান ভূমি মেলা উপলক্ষে কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে প্রতিটি শ্রেণি থেকে ৫ জন করে ছাত্রীকে মনোনীত করেন। প্রতিযোগিতা শেষে সাথী আক্তারসহ কয়েকজন বান্ধবী মসজিদে নূর ঘুরতে যান। সেখানে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়। তিনি বিষয়টি তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমানকে জানান। পরে আতাউর রহমান ছাত্রীদের ডেকে সতর্ক করেন এবং ভবিষ্যতে এমন কাজ না করার পরামর্শ দেন।এরপর চলতি মাসের ১ তারিখে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন নূর মোহাম্মদ। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি প্রায়ই সাথীকে শাসাতেন এবং তার অভিভাবককে স্কুলে আনতে বলতেন।সহপাঠীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ঘটনার দিন সপ্তম শ্রেণির ক্লাস চলাকালীন প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ সবার সামনে সাথীকে শাসাতে থাকেন। অভিভাবককে কেন আনা হয়নি, তা জিজ্ঞেস করেন এবং বলেন—অভিভাবক না আনলে তাকে টিসি (ছাড়পত্র) দিয়ে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হবে। অপমানে কাঁদতে কাঁদতে সাথী ক্ষমা চায় ও ভবিষ্যতে এমন হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপরও শিক্ষক সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। কিছুক্ষণ পরই সাথী নিজের হাতে আঘাত করে এবং পরে ছয়তলা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক ফজলুল হক বলেন, সাথী খেলাধুলায় খুব ভালো ছিল। ময়মনসিংহ পর্যন্ত খেলতে গিয়েছে। ঘটনার দিনও সে কাবাডি খেলেছে এবং তাকে টিম লিডার হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল। এমন ঘটনা ভাবতেই পারছি না।
সাথীর বড় বোন আশরাফুন নাহার আখি অভিযোগ করেন, স্কুলে ভর্তি করার সময় তো অভিভাবকের ফোন নম্বর জমা রাখা হয়। যদি আমার বোন কোনো ভুল করে থাকে, আমাদের জানানো যেত। অথচ তাকে দিনের পর দিন মানসিক চাপে রাখা হয়েছে। এই ঘটনার বিচার চাই।মুঠোফোনে কথা হলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ বলেন, ভূমি অফিসে একটি অনুষ্ঠানে পাঠানোর পর তারা মসজিদে ঘুরতে গিয়েছিল। তাই আমি সাথীর অভিভাবককে ডাকতে বলি। কিন্তু তার অভিভাবক না আসায়, আমি আবারও তাকে বলি। কিছুক্ষণ পরেই জানতে পারি সে ছয়তলা থেকে লাফ দিয়েছে।বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুদ রানা বলেন, ঘটনার তদন্তে দ্রুত একটি কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তেই জানা যাবে ঘটনার প্রকৃত কারণ।এই ঘটনায় একজন শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। একজন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার চেষ্টার মতো গুরুতর বিষয়ের পেছনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ ও কর্তৃপক্ষের আচরণ কতটা দায়ী, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্নের শেষ নেই। এলাকাবাসী ও অভিভাবক মহল এ ঘটনায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।