মোঃ বুলবুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের বাউরা গ্রামের ১ শিশু কন্যার জননী সাহের বানু লিপি নামের এক নারী সৌদির রিয়াদে কাজ করতে গিয়ে সেখানে নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা তার দাপ্তরিক কাজের বাইরে ওই নারীকে দেশে ফিরে নিয়ে আসার জন্য সহযোগিতা করে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর এই মানবিকতায় উলিপুরের উল্লিখিত গ্রামটিতে খুশির বন্যা বইছে একই সাথে তিনি প্রশংসায় ভাসছেন। গ্রামবাসি দলে দলে লিপি নামের ওই নারীকে দেখতে যাচ্ছেন তাদের বাড়িতে।
১৭ আগস্ট (রবিবার) বিষয়টির পূর্বাপর খোঁজ খবর নিতে গিয়ে জানা যায়, লিপি নামের ওই নারী ১৫ আগস্ট বাড়িতে ফিরে এসেছেন।
জানা যায়, বিপদগ্রস্ত ওই নারী অভাবের তাড়নায় নিজ শিশু কন্যাকে তার নানীর কাছে রেখে গত ৮-৯ মাস পূর্বে কাজের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের রিয়াদে আহমেদ নামের এক পুলিশের বাড়িতে যান। সেখানে কাজ করতে গিয়ে তিনি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে আসছিলেন। এমনকি তার জীবন নাশেরও সংশয় ছিলো। তিনি মোবাইল কলের মাধ্যমে বিষয়টি তার পরিবারের লোকজনকে জানান। এদিকে বিশেষ করে ওই নারীর মা কোহিনুর বেগম ও পরিবারের অন্য লোকজন খবরটি শুনতে পেয়ে দিকবিদিক হারিয়ে ফেলেন। কিভাবে কি করলে তাকে উদ্ধার করা যায় এনিয়ে যখন কোন কূলকিনারা পাচ্ছিলেন না ঠিক সেই মহুর্ত্বে ওই নারীর ছোট বোন কলেজ ছাত্রী মারুফা রুমী হোয়াটসঅ্যাপ প্রিয়বোন লিপিকে উদ্ধারের আশায় করুণ আকুতিতে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানার কাছে একটি ম্যাসেজ পাঠায়। মানবিক জেলা প্রশাসক বিষয়টি আমলে নেন। ভাবেন কি করা যায়। যেই ভাবনা সেই কাজ। ওই বিপদগ্রস্ত নারীকে উদ্ধারে প্রবাসী কল্যাণ মিনিস্ট্রিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে পত্র প্রেরণ করেন। তিনি এখানেই থেমে থাকেন নি। ভিন্নভাবেও উপায় খুঁজতে থাকেন। তাঁর চৌকস দূরদৃষ্টিতে সংশ্লিষ্ট মিনিস্ট্রিতে কুড়িগ্রামের কার সাথে ভালো সম্পর্ক আছে এমন লোককে খুঁজে বের করেন। তিনি হলেন কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সাবেক সহ- সভাপতি জনাব লুৎফর রহমান।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ওই নারীর ছোটবোন রুমীর প্রেরীত হোয়াটস অ্যাপের ম্যাসেজটি গত ১৯ মে ২০২৫ তারিখে লুৎফর রহমানকে ফরওয়ার্ড করে দিয়ে ওই নারীকে উদ্ধারের জন্য সহযোগিতা চান।
লুৎফর রহমান প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সিনিয়র সচিব ড.নেয়ামতউল্লাহ ভূঁইয়া এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড.আসিফ নজরুলের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টির দ্রুত সমাধান করার জন্যে ফলোআপ কাজ শুরু করেন। একই সাথে তিনি
রিক্রুটিং এজেন্সির নাম , লোকজন- কে খুঁজে বের করে জেলা প্রশাসকের
মাধ্যমে ওই নারীকে উদ্ধারে সরকারি কাজে ফলো আপ দিতে থাকেন।
অবশেষে জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও লুৎফর রহমানের সহযোগিতায় গত ১৫ আগস্ট ২০২৫ তারিখে ওই নারী ফিরে এসেছেন নিজ গ্রামে নিজের শিশু কন্যার কাছে। ফিরে এসে তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা, লুৎফর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট সকলকে এবং দাবি করেছেন বাংলাদেশ থেকে যেন কোন নারীকে সৌদির মতো দেশে প্রেরণ করা না হয়।
নির্যাতিত নারী লিপিকে নিজ দেশে ফিরে আনার কাজে সহযোগিতা করতে পেয়ে কেমন লাগছে এমন অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে
জনাব লুৎফর রহমান বলেন, এধরণের মানবিক কাজে ভালোলাগার অনুভূতি বলে বুঝানো সম্ভব নয়। আমি রাজনৈতিক মানুষ।
রাজনীতি করার সুবাদে জীবনে অনেক ভালো কাজ করার সুযোগ হয়েছে। ভালো কাজ করতে গিয়ে কুড়িগ্রাম কেন্দ্রিক বিতর্কিত রাজনৈতিক এক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করতেছি আমি। অনিয়ম, অন্যায় আর ভাওতাবাজি রাজনীতির বিরুদ্ধে আমার একক লড়াই এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা জেলাময়। তবে নির্যাতিত ওই নারীকে নিজ দেশে ফিরে আনার কাজে সহযোগিতা করার মতো ভালো কাজ আমার জীবনে অদ্বিতীয়। এজন্য তিনি কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসককে অশেষ ধন্যবাদ জানান। তিনি সরাসরি স্বীকার করে বলেন। নির্যাতিত ওই নারীর ছোট বোন রুমীর হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেজকে জেলা প্রশাসক সেদিন যদি এড়িয়ে যেতেন। তাহলে আজকের গল্পটা হয়তো অন্যরকম হতে পারতো। মানবিক কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সেটি করেন নি বলেই
আমিও ওই মানবিক কাজের অংশ হতে পারলাম। এজন্য তিনিও কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসককে অশেষ ধন্যবাদ জানান।
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, আমরা সবাই মিলে সহযোগিতা করেছি বলে প্রবাসে নির্যাতিত আমাদের একজন মা, একজন বোন, একজন মেয়েকে আমরা উদ্ধার করতে পেয়েছি। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো কাজ। আনন্দ পাবার মতো কাজ। এই কাজে সহযোগিতা করায় সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।